আপনি কি ভালো বক্তা হতে চান?
: লোকের সামনে বক্তৃতা দেয়া কি আসলেই ভয়ের? সবার দ্বারা কি তা সম্ভব হয়ে ওঠে ? এ ক্ষমতা কি জন্মগত?
কেউ কি চেষ্টা আর সাধনা করে এ ক্ষমতা অর্জন করে নিতে পারে? যারা পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে গবেষণা করে থাকেন তাদের একদম সাদামাটা জবাব-একটু উদ্যোগী হলেই আপনিও ভালো বক্তা হয়ে উঠতে পারেন। অনেক লোকের সামনে একদম সহজ স্বাভাবিক থেকে সাবলীল বক্তৃতা দেয়ার ক্ষমতা আপনিও রপ্ত করে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বাড়তি কিছু দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিষয়বস্তু
আপনি যদি শিক্ষানবিশ বক্তা হয়ে থাকেন তাতে সাবলীল বক্তব্যের ক্ষেত্রে প্রথম শর্ত হল বক্তব্যের বিষয়বস্তু হতে হবে একদম সহজ সরল। যে কোনো বক্তব্যের মূল্য লক্ষ্য হল শ্রোতাদের তথ্য দেয়া। তাতে বড়জোর দুই একটা নতুন তথ্য থাকাই যথেষ্ট। ভারি বক্তৃতা কেবলমাত্র শ্রোতাদের মনাকর্ষণ হারায় না, বক্তা এতে সাবলীলতা হারিয়ে ফেলে। বক্তাকে দুটো দিক অবশ্যই জানা থাকা চাই। প্রথমে আপনাকে পরীক্ষা করে নিতে হবে এক বা দুইটি বাক্য দিয়ে, পুরো প্রসঙ্গ উপস্থাপনা করতে পারেন কিনা মানে মন্তব্য প্রসঙ্গটা একদম স্বচ্ছ তথ্যনির্ভর আর লক্ষ্য অভীষ্ট হওয়া চাই। আপনি যা বলতে যাচ্ছেন সে সম্পর্কে যদি আপনার একদম স্বচ্ছ পরিষ্কার ধারণা না থাকে সে ক্ষেত্রে বক্তৃতা দেয়ার চেষ্টাই করা উচিত না। এতে আপনি শ্রোতাদের কাছে হাস্যপদ পাত্র হয়ে দাঁড়াবেন। সুতরাং বক্তৃতা দেয়ার শুরুতে বিষয়বস্তু একবার পরখ করে নিন-তা হতে হবে সরল, অনেক বেশি তথ্য সম্ভার করে তা যেনো ভারি হয়ে না যায়, অল্প কথায় বোঝানো যায় আর শ্রোতাদের শোনানোর আগে বক্তা যেনো এ আত্মবিশ্বাস রাখেন যা বলতে যাচ্ছেন সে সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ অবহিত।
সুবিন্যাস্ত পরিকল্পনা
আপনার বক্তব্য নাতিদীর্ঘ বা অনেক বড় যেমনই হোক আপনাকে আগে থেকেই ঠিক করে নিতে হবে কোন পয়েন্টের পর কোন প্রসঙ্গ আনবেন। সামনে পুরো লিখিত বক্তব্য রেখে বক্তৃতা দেয়ার চেয়ে মঞ্চে না যাওয়াটাই শ্রেয়। বক্তব্য দেয়াকালে আপনার দৃষ্টি থাকবে দর্শকের দিকে। সাথে ছোট কাগজ বা চিরকুট থাকবে। তাতে শুধুমাত্র পয়েন্টগুলো সাজানো থাকবে। এতে করে বিষয়বস্তু উপস্থাপনার বিন্যাস আর সাবলীলতা অক্ষুণ্ন থাকবে।
পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট সাইকোলজিস্টরা এ শিরোনামে একটা অদ্ভুত উপদেশ দিয়ে থাকেন। তাদের উপদেশ বক্তব্যের একদম শেষ কথা ছোট কাগজের ওপরে লিখে রাখা। এর কারণ বহুবিধ। বক্তব্যের একদম শেষ কথা শ্রোতারা সবচেয়ে বেশি স্মরণে রাখে। এ মন্তব্যেই শ্রোতাদের সর্বাধিক প্রতিক্রিয়ান্ব্বিত করে। কোনোভাবেই তা যেনো বাদ পড়ে না যায় বা তাড়াহুড়োর কারণে খন্ডিত হয়ে না যায়। চিরকুটের একদম মাথায় লিখে রাখার কারণে পয়েন্ট ভিত্তি করে বক্তা যেটাই বলুক কিন্তু্তু বক্তব্য সম্ভাব্যমুখী থাকে, এটি সবসময় স্মরণে থাকে। এটি বক্তার আত্মবিশ্বাস অনেক মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়।
বক্তব্য সংক্ষিপ্ত রাখুন
সাবলীল বক্তৃতা দেয়ার তৃতীয় শর্ত হল তা সংক্ষিপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ শ্রোতারা দীর্ঘক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না, এমনকি বক্তৃতার বিষয়বস্তু যতই আকর্ষণীয় হোক না কেনো। কারণ দীর্ঘক্ষণ বক্তৃতার ক্ষেত্রে শ্রোতাদের মাঝে বিরক্তির প্রকাশ শুরু হয়ে যায়। তা আপনার বক্তব্য দানের আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক বুমেরাং হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে আপনার নার্ভাসনেস ভাব আরও প্রকট হয়ে দাঁড়ায়।
গবেষকদের উপদেশ ভালো বক্তা হতে চাইলে যে কোনো বক্তব্য বারো মিনিটের বেশি দীর্ঘায়িত করা কোনোভাবেই উচিত নয়। সময়, পরিস্থিতি, পরিবেশ ভেদে এতেও বাড়তি কাটছাটের দরকার হতে পারে। সিডিউল বক্তব্য, হলঘরে এয়ারকন্ডিশনার নষ্ট, শ্রোতারা গরমে অস্থির। এ ক্ষেত্রে বক্তব্য যতই ছোট করবেন, ততই লাভ আপনার। দর্শকদের করতালি আপনাকে আশ্বস্ত করে তুলবে, পাশাপাশি মঞ্চে আপনি অনেক বেশি সাবলীল আর স্বাচ্ছন্দ্য থাকতে পারবেন।
কৃত্রিমতা পরিহার করুন
বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে সবধরনের কৃত্রিমতা একদম সচেতনভাবে পরিহার করা চাই। তবেই আপনি স্বাচ্ছন্দ্য থাকতে পারবেন। অভিনয় করতে গেলে এ বানানো কৃত্রিমতা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে আপনার কাছে। আপনি হতাশ হবেন, আত্মবিশ্বাস কমে আসবে। যে গল্প আপনি নিজ অন্তর হতে হাসির মনে করেন না, কখনোই আশা করতে যাবেন না শ্রোতাদের কাছে তা হাসির হবে। বক্তব্যে পরিবেশিত তথ্য যদি আপনার কাছে চমকপ্রদ মনে না হয়, দর্শকদের কাছে তা চমকপ্রদ হবে কখনোই এমনটি ভেবে বসবেন না।
লেখক রবার্ট ফ্রস্ট একটা সুন্দর কথা বলেছিলেন ‘যে হৃদয়বিদারক কাহিনী লেখকের চোখের জল ঝরায় না, পাঠকদের বেলাতেও তেমনটি ঘটে’। ঠিক এ প্রসঙ্গ চলে পাবলিক স্পিকিং-এর বেলাতে। বক্তব্যের বিষয়বস্তু যদি আপনাকে সত্যি সত্যিই কান্নাতুর করে, শ্রোতারাও তাতে আপনার অনুভূতি ভাগাভাগি করে নেবেন। আসলে বক্তার মনে বিশেষ অনুভূতি সঞ্চারের দরকার। আপনি বক্তা, সামনে একরাশ শ্রোতা। আপনি মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন শ্রোতাদের এমন কোনো অভিজ্ঞতা শোনানোর জন্য, যেটি আপনি জানেন কিন্তু্তু শ্রোতারা অজ্ঞ। এতে শ্রোতাদের তথ্য জানালেই চলবে না, আপনার পুরো অনুভূতি ভাগাভাগি করে নেয়া চাই। এ ক্ষেত্রে ‘আমি’ ব্যবহার করুন, প্রকাশ করুন এ অভিজ্ঞতার অনুভূতি থ্রিল, ভয়, অনুশোচনা। (চলবে…………)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন