ব্রেকআপের পর ছেলের

লাইফ স্টাইল

খবরটোয়েন্টিফোর.কম: ব্রেকআপের পর অনেকেই অনেক ভেঙে পড়েমেয়েরা খুব বেশী ভেঙে পড়লেও ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশ তাড়াতাড়ি সামলে উঠতে পারে, আর যেসব ছেলেরা সত্যি সত্যি ভালোবেসে থাকে, তাদের জীবণে বেশ অনেকটা সময়ই চলে যায় এ ব্রেকআপের সাতকাহন গাইতে গাইতে, ব্রেকআপের পর বেশ কিছুটা সময় বেশ গুরত্বপূর্ণতারা সেসময় যেসব পর্যায়ের ভিতর দিয়ে যায়, তারই কিছু তুলে ধরছি আজ কয়েকটি পর্যায়ে

১ম পর্যায়, “আমার মন মানে না…”:এই পর্যায়টা ব্রেক আপের সবচেয়ে ইমোশনাল পর্যায়একই সাথে গুরুত্বপূর্ণও – কেননা এই সময়ে নেয়া যে কোন সিদ্ধান্ত আলটিমেটলি জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেব্রেক আপের এ পর্যায়ে কারো ভেতর থেকে যে ইমোশনগুলো বেরিয়ে আসে তা একদমই Raw ইমোশনঅধিকাংশের ক্ষেত্রেই ইমোশনটা বেরোয় বুক ফাটা কান্না বা তীব্র মানসিক বেদনার রূপেতবে ব্যতিক্রমী কারো কারো ক্ষেত্রে ব্রেকআপ স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়তবে যেটাই হোক না কেন, তা স্বাভাবিকের বাইরে, এর সবই আবেগের বশেযাদের জন্য ব্রেকআপটা কষ্টের তাদের মন মানেনা… “কেন আমিই এতো দুর্ভাগা” এই প্রশ্ন বারবার ফিরে আসে মনেব্রেক ঠিক পরপর এই তাৎক্ষণিক পর্যায়টিতে অধিকাংশ মানুষ ৩টি কাজের একটি করে:

ক. নিজের ক্ষতি করে (আত্মহত্যা, ড্রাগস ইত্যাদি)

খ. যে মেয়ের সাথে রিলেশন ছিলো তার ক্ষতির চেষ্টা করে (ফেইসবুক/ইমেইল হ্যাক, নেটে বাজে ছবি ছাড়া, মোবাইল নাম্বার ম্যানিপুলেশন)

গ. যার কারণে এই ব্রেক আপ (অন্য আরেক ছেলে হতে পারে) তার ক্ষতির চেষ্টা করে

এবং আরেকটি টাইপ আছে যারা এই ৩টির একটিও করে না – They just let it go. এরা আবার ৩ প্রকার:

ক. মন খারাপ করে থাকার দল

খ. ‌’এই বেশ ভালো আছি’ বেশ ধরা দল

গ. ঘন্টায় ঘন্টায় নতুন রিলেশন আর ব্রেকআপের কারণে এদের মনে ব্রেকআপ আর নতুন করে কোন অনুভূতির জন্ম দেয় না – সেই দল (সঙ্গতঃ কারণেই এই পোস্টে তাদের কথা আলোচনা করা হয়নি)

উপর্সগ:

১. শুধু ওকে ফোন দিতে ইচ্ছে করে/দেখা করতে ইচ্ছে করে/মনে হয় এখনই গিয়ে দেখা করি – যদি জানা আছে তাতে সিদ্ধান্ত বদলাবে না

২. নিজে থেকেই নিজের দোষ/ত্রুটি বের করে ব্রেকআপের পিছনে নিজের দোষগুলো খুঁজে বের করা – যদিও হয়তো আদতে নিজের কোন দোষই নেই

৩. ওর রেখে যাওয়া স্মৃতি চিহ্নগুলো হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখা… মন আরও খারাপ করাকেউ কেউ অবশ্য এগুলো নষ্ট করে ফেলে

কমন ডায়ালগ:

১. “আমার তো কোন দোষ ছিলো না… তাহলে কেন….?

২. “সব মেয়ে এক…” (এটা একটা বিশেষ টাইপের ছেলেরা বলে)

৩. “আমি আর কখনও রিলেশন করতে পারবো না…”অত্যন্ত ইমোশনাল এ পর্যায়টাকে ঠিক শব্দে প্রকাশ সম্ভব নয়যতো কম বলে শেষ করা যায় ততোই ভালোতাই পরের পর্যায়ে চলে যাচ্ছি

২য় পর্যায়, সান্ত্বনা: আপনার ফ্রেন্ডকূল এবং পরিচিতরা যারা আপনার রিলেশনের ব্যাপারে জানতো তারা এ পর্যায়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে আপনাকে সান্ত্বনা দিতেবিশ্বাস করুন আর নাই করুন, মনে মনে আপনার বেশির ভাগ বন্ধুই (স্পেশালি যাদের রিলেশন আছে) কিন্তুই খুশিখুশি এ জন্য যে – “যে এটলিস্ট তারা আপনার মতো এতো দুর্ভাগা না…” এটা মানুষের আদি ধর্মঅপরের বিপদের কথা চিন্তা করলে সচেতন বা অবচেতনভাবে আমাদের মন আনন্দ পায়”জাস্ট ঐ কষ্টকর পরিস্থিতিতে সে নেই” এই চিন্তাটাই মনে আনন্দের খোরাক জোগানোর জন্য যথেষ্টএটা খারাপ কিছু নয়এটা মানুষের ধর্মইনফ্যাক্ট এটার কিছু ভালো দিক আছেযেমন ধরুন, যেদিন আপনার ব্রেকআপের কথা আপনার ফ্রেন্ডরা শুনলো, পরের বার তাদের গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ডের সাথে আলোচনায় এ প্রসঙ্গটা একবার হলেও অন্ততঃ উঠবেতখন তারা একে অপরকে প্রমিস করবে – তারা কখনও এভাবে বিচ্ছেদ ঘটাবে নারিলেশন যে পর্যায়েই থাকুক না কেন – তারা আবারও নতুন করে অনুধাবন করবে, একে অপরকে পেয়ে তারা কতোটা লাকিনিজেদের রিলেশনের অবস্থা নিয়ে শঙ্কিত ছিলো, এমন কাপলদের নিজেদের সমস্যা আর কিছু বলে মনেই হবে নাপ্রিয় বন্ধুর ব্রেকআপের পর এ সময়টায় গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড হঠাৎ করেই একটু বেশিই সুইট হয়ে যেতে পারে – তবে এটা টেম্পোরারিএর কোন স্থায়ী প্রভাব নেইযাই হোক এ পর্যায়ে ফ্রেন্ডকূল ও পরিচিতদের সান্ত্বনা আর উপদেশ বাণীতে সিক্ত হবেন আপনি -

১. “যা হয়েছে ভালো জন্য হয়েছে…” (হ তোরে কইসে!)

২. “জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না…”

৩. “এটা ক্যারিয়ার গড়ার সময়…” (নরমালি এটা বন্ধুরা না, স্বজনেরা বলে)

৪. “নিশ্চয়ই তোমার কপালে জন্য এর চাইতেও ভালো কিছু অপেক্ষা করছে…”

৫. “থাক দোস্ত… বাদ দে…”

৬. “ফ্রেন্ডদের সাথে সময় কাটাও…”

৭. “ব্যাপার না… সব ঠিক হয়ে যাবে…”

৮. “চল বাইরে চল…”

আপনার রিলেশন সম্পর্কে আপনার ফ্রেন্ডদের আগে না বলা কিছু তথ্যও উঠে আসতে পারে এ পর্যায়ে -

১. “এমনিতেও এই রিলেশন নিয়ে তোর পরে সমস্যা হইতো…”

২. “ওর চাইতে হাজার গুণ বেটার মেয়ে তুই পাবি…” (৫ মাস আগেও “তোদের দেখে ঈর্ষা হয় বলার পর”)

৩. “এমনিতেও ওর অনেক সমস্যা ছিলো…”

৪. “আমার কেন জানি আগে থেকেই মনে হচ্ছিলো রিলেশনটা টিকবে না…”

৩য় পর্যায়, নিজেরে বুঝাই: ব্রেক আপের এই পর্যায়টা একান্তই নিজেরনিজের জীবন, ক্যারিয়ার সব কিছুই নতুন করে শুরু করার একটা প্রত্যয় এই স্টেজে জন্মায়এ পর্যায়ে একটা ছেলে এমন অনেক কিছুই করবে, যা সে সাধারণ অবস্থায় কখনোই করতো নাএমন অনেক কাজ সে করবে যা এইতো ক’দিন আগেও তার কাছে ছ্যাবলামি মনে হতোএমন অনেক মানুষ যাদের সাথে দীর্ঘদিন কোন যোগাযোগ ছিলো না/ বা অনেকটা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গিয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ বাড়তে পারেপুরো ব্যাপারটাই আসে জীবনে সামগ্রিক পরিবর্তনের একটা চিন্তা থেকে

৪র্থ পর্যায়, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো: এ পর্যায়ে সুযোগ পেলেই বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর একটা প্রবণতা দেখা যায়বাসার বিভিন্ন কাজে এবং ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে অন্তরঙ্গতা বাড়েপুরো দুনিয়া কেমন একটা ‌’মায়ার চশমা’ দিয়ে ফিল্টার হয়ে চোখে এসে ধরা দেয়মানুষের উপকার করতে ইচ্ছে করেমানুষের সাথে একটু বেশিই নরমভাবে কথা বলার প্রবণতাও দেখা যায়

উপসর্গ:

১. বন্ধুবান্ধবদের সাথে বের হয়ে তাদের বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ডেদের মধ্যে রিলেশনের অন্তরঙ্গতা দেখে খুব প্রচন্ড ঈর্ষা ও অস্বস্তি

২. কথায় কথায় বন্ধুদের কাছে – “ইশ ও এইটা করতো…”, “আই উইশ ও এইটা দেখতো…” বা “আমি আর ও প্রায়ই এটা করতাম…” টাইপের কতাবার্তা

৩. সুযোগ পেলেই মানুষকে নিজের ব্রেকআপের কথা জানানো, সহানুভূতির আশায় নয় – এটার মধ্যে কোথায় যেন ক্রেডিট নেয়ার মতো বিষয় আছে

৪. “জীবনে অনেক কিছু দেখে ফেলেছি…” টাইপের মানসিকতা

৫. ফেইসবুকে নিজের জীবনদর্শন তুলে ধরে স্ট্যাটাস দেয়াকারো কারো স্ট্যাটাস দেখলে মনে হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে

৬. দাড়ি রাখা

৫ম পর্যায়, আমি যেন কার আশায আশায় থাকি: এতোদিনে আপনার ব্রেকআপের ঠিক পরপর টাটকা ক্ষত অনেকটাই শুকিয়ে গেছেতবে পরিচিত যায়গা, পরিচিত মানুষ দেখলে বুক ফাঁকা ফাঁকা লাগেপরিচিত জায়গা দিয়ে কোথাও যাওয়ার সময় আগের কথা মনে পড়েসাথে একটা ভয় কাজ করে যদি দেখা হয়ে যায় – তাহলে কি হবে? আবার মনে মনে ঠিকও করে ফেলেন দেখা হলে কি করবেনযদিও ভয় পাচ্ছেন দেখা হওয়ার বিষয়টা চিন্তা করে, আবার কাইন্ড অফ যেন চাচ্ছেনও দেখা হোক

৬ষ্ঠ পর্যায়, নতুন করে আবারও: ব্রেকআপের স্মৃতি মনে আর অবশিষ্ট নেই তেমন একটা -শুধু খুব অকেশনালি মনে পড়েমনে মনে আপনি ঠিক করে ফেলেছেন ওর সাথে সামনে কখনও দেখা হলে (তা নতুন বয়ফ্রেন্ড সহই হোক না কেন) আপনি ওকে ওর নতুন লাইফের জন্য কনগ্র্যাচুলেট করবেন – যেন এতোটুকু মানসিক শক্তি আপনি অর্জন করেছেনআপনার মধ্যে মেয়ে দেখলেই আগ্রহ জন্মাচ্ছেবন্ধুকূলকেও জানিয়ে দিয়েছেন আপনি রেডি – হয়তো খুঁজতেও বলে দিয়েছেন

উপসর্গ:

১. অনলাইনে/ফেইসবুকে বা ফ্রেন্ডের মাধ্যমে নতুন মেয়েদের সাথে পরিচয় হওয়া মাত্র তাৎক্ষণিকভাবে রিলেশনের জন্য মনস্থির করা। (যদিও আপনি নিজেও জানেন ৯৯% চান্স যে সেটা কাজে আসবে না)

২. ডার্টি জোকস/গালি প্রিয়তা – যদিও আপনি এসবের জন্য মোটেও বিখ্যাত নন

৩. নিজের মধ্যে সাময়িক লুইচ্চামি গ্রো করা

৪. হঠাৎ করে আপনার মনে হচ্ছে রিলেশনে থাকা অবস্থায় জগৎটা অনেক সহজ ছিলো, সবকিছু খুব নিশ্চিৎ ছিলো – হাত বাড়ালেই আরেকটা হাতের ছোঁয়া, চাইলেই একটা কাঁধে মাথা রাখাকিন্তু এখন রিলেশন ভেঙে যাওয়াতে জগৎটাকে অনেক কঠিন মনে হচ্ছেআবারও নতুন করে রিলেশন, আবারও নতুন করে শুরু আদৌ হবে কিনা – ধারণাটাকে অলরেডি আপনি প্রশ্নবিদ্ধ করতে শুরু করেছেনঠিক প্রথম রিলেশনটার আগে যেমনটা মনে হয়েছিলো আপনার



মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

যমুনা নিউজ : ‘ইমাম বুখারী’ কাল প্রবাহে একটি বিস্ময়ের নাম। স্মৃতির প্রখরতা, জ্ঞানের গভীরতা, চিন্তার বিশালতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, অটুট সততা আর বিশাল পর্বত সম হিম্মতের এক মূর্ত প্রতীক এই মহাপুরুষ। তিনি ইলমে হাদীসের এক বিজয়ী সম্রাট। তার সংকলিত হাদীসের মহামূল্যবান সংকলন সহীহুল বুখারী বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে আল্লাহর কিতাব মহা গ্রন্থ আল কুরআনের পরেই যার অবস্থান। কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম উম্মাহ তার সাধনার কাছে ঋণী। আসুন, খুব সংক্ষেপে আমরা এই মনিষীকে জানার চেষ্টা করি। নাম, জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ তিনি হচ্ছেন সমকালীন মুহাদ্দিছদের ইমাম হাফেয আবু আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরা বিন বারদিযবাহ আলজু’ফী। তাঁকে আমীরুল মুমিনীন ফীল হাদীছও বলা হয়। ১৯৪ হিঃ সালের ১৩ই শাওয়াল জুমআর রাত্রিতে তিনি বুখারায় জন্ম গ্রহণ করেন। শৈশব কাল ও জ্ঞান অর্জনঃ শিশুকালেই তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন। পিতার মৃত্যুর পর মাতার তত্বাবধানে তিনি প্রতিপালিত হন। দশ বছর বয়সে উপনীত হয়ে তিনি জ্ঞান চর্চার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। অল্প বয়সেই তিনি পবিত্র কুরআন মুখস্ত করেন। শৈশব কালে মক্তবে লেখাপড়া করার সময়ই আল্লাহ্ তাঁর অন্তরে হাদীছ মুখস্ত ও তা সংরক্ষণ করার প্রতি আগ্রহ ও ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন। ১৬ বছর বয়সেই হাদীছের প্রসিদ্ধ কিতাবগুলো পাঠ সমাপ্ত করেন। তাঁর জীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি ছোট থাকতেই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এতে তাঁর মাতা আল্লাহর কাছে খুব ক্রন্দন করলেন এবং স্বীয় সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফেরত দেয়ার জন্য তাঁর কাছে অবিরাম দুআ করে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ এক দিন তাঁর মা স্বপ্নে দেখলেন যে আল্লাহর নবী ইবরাহীম (আঃ) তাঁকে লক্ষ্য করে বলছেনঃ ওহে! তোমার সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফেরত চেয়ে আল্লাহর দরবারে তোমার ক্রন্দনের কারণে তিনি তোমার সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তখন তিনি প্রকৃত ঘটনা যাচাই করার জন্য স্বীয় সন্তানের কাছে গিয়ে দেখেন সত্যিই তাঁর সন্তান সম্পূর্ণ দৃষ্টি শক্তি ফেরত পেয়েছে। ইমাম বুখারীর স্মরণ শক্তির প্রখরতাঃ ১৮ বছর বয়সে তিনি হজ্জ পালনের জন্য মক্কায় গমণ করেন। মক্কায় অবস্থান করে তিনি ইলমে হাদীছের চর্চা শুরু করেন। অতঃপর তিনি এই উদ্দেশ্যে অন্যান্য দেশ ভ্রমণ করেন এবং এক হাজারেরও অধিক সংখ্যক মুহাদ্দিছের নিকট তেকে হাদীছ সংগ্রহ করেন। জ্ঞান অর্জনের জন্য সারা রাত জেগে তিনি অত্যন্ত কঠিন পরিশ্রম করতেন। তাঁর স্মৃতি শক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। বলা হয় যে তিনি সনদসহ ছয় লক্ষ হাদীছের হাফেয ছিলেন। আলেমগণ তাঁর জীবনীতে উল্লেখ করেছেন, যে কোন কিতাবে একবার দৃষ্টি দিয়েই তিনি তা মুখস্ত করে নিতেন। তাঁর জীবনীতে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি যখন বসরার মুহাদ্দিছদের হাদীছের ক্লাশে হাজীর হতেন তখন অন্যান্য ছাত্রগণ খাতা-কলম নিয়ে বসে উস্তাদের নিকট থেকে হাদীছ শুনতেন এবং প্রতিটি হাদীছই লিখে ফেলতেন। কিন্তু ইমাম বুখারী তা করতেন না। কয়েক দিন পর তাঁর সাথীগণ জিজ্ঞেস করলঃ আপনি শুধু আমাদের সাথে বসে থাকেন কেন? হাদীছগুলো না লেখার কারণই বা কি? এভাবে সময় নষ্ট করে লাভ কি? বন্ধুরা যখন পিড়াপিড়ি করতে থাকলো তখন ১৬ দিন পর তিনি বললেনঃ আপনারা আমার নিকট বারবার একই প্রশ্ন করছেন। আপনারা যে সমস্ত হাদীছ লিখেছেন তা আমাকে পড়ে শুনান। বন্ধুরা তা দেখানোর পর তিনি সমস্ত হাদীছ মুখস্ত শুনিয়ে দিলেন এবং আরও অতিরিক্ত পনের হাজার হাদীছ শুনালেন। অতঃপর তাঁর সাথীগণ তাদের কাছে রক্ষিত কিতাবের হাদীছগুলো ইমাম বুখারীর মুখস্ত কৃত হাদীছের সাথে মিলিয়ে ভুল-ভ্রান্তি ঠিক করে নিলেন। অতঃপর তিনি বন্ধুদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ এরপরও কি তোমরা বলবে যে, আমি এখানে অযথা সময় নষ্ট করছি? সে দিন থেকেই হাদীছ শাস্ত্রে তারা ইমাম বুখারীকে প্রাধান্য দেয়া শুরু করলেন। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেনঃ আমার অন্তরে এক লক্ষ সহীহ হাদীছ ও দুই লক্ষ যঈফ হাদীছ মুখস্ত রয়েছে। সহীহ বুখারীর অন্যতম ভাষ্যকার কুস্তুলানীর বক্তব্য অনুযায়ী তিনি ছয় লক্ষ হাদীছের হাফেয ছিলেন। মুহাদ্দিছ ইবনে খুযায়মা (রঃ) বলেনঃ পৃথিবীতে ইমাম বুখারী অপেক্ষা অধিক অভিজ্ঞ এবং হাদীছের হাফেয আর কেউ জন্ম গ্রহণ করে নি। কেউ কেউ বলেনঃ খোরাসানের যমীনে ইমাম বুখারীর মত আর কেউ জন্ম গ্রহণ করে নি। ইমাম বুখারীর বাল্যকালের একটি ঘটনা অত্যন্ত চমকপ্রদ। তখন তিনি দশ বছর বয়সের কিশোর। এ সময় তদানীন্তন শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ ইমাম দাখিলীর ক্লাশে হাদীছের পাঠ গ্রহণ করছিলেন। মুহাদ্দিছ দাখিলী এই সনদে একটি হাদীছ উপস্থাপন করলেনঃ سفيان عن أبي إبي الزبير عن إبراهيم “সুফিয়ান বর্ণনা করেন আবুয্ যুবাইর হতে আর আবুয যুবাইর বর্ণনা করেন ইবরাহমী হতে।” বালক বুখারী প্রতিবাদ করে বললেনঃ আবুয যুবাইর ইবরাহীম হতে হাদীছ হাদীছটি বর্ণনা করেন নি। মুহাদ্দিছ দাখিলী তাঁকে ধমক দিয়ে বললেও তিনি প্রশান্ত চিত্তে বললেনঃ أبو الزبير عن إبراهيم নয়: বরং زبير بن عدي عن إبراهيم আপনি দয়া করে একবার আপনার পান্ডুলিপির সাথে মিলিয়ে দেখুন। অতিরিক্ত জোর দেয়ার কারণে উস্তাদের মনে সংশয় দেখা দিল। তিনি পান্ডুলিপি দেখে ইমাম বুখারীকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমার কথাই ঠিক। তখন মুহাদ্দিছ দাখিলী তার জন্য প্রাণ খুলে দুআ করলেন। হাদীছ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দেশ ভ্রমণঃ হাদীছ সংগ্রহের জন্য ইমাম বুখারী অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। সে সময় যে সমস্ত দেশে বিজ্ঞ মুহাদ্দিছগণ বসবাস করতেন তার প্রায় সবগুলোতেই তিনি ভ্রমণ করেছেন এবং তাদের নিকট থেকে হাদীছ সংগ্রহ করেছেন। খোরাসানের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও তিনি যে সমস্ত দেশে ভ্রমণ করেছেন তার মধ্যে রয়েছে মক্কা, মদীনা, ইরাক, হিজাজ, সিরিয়া, মিশর এবং আরও অনেক শহর। বাগদাদে আগমণ ও তাঁর স্মরণ শক্তির পরীক্ষাঃ তৎকালীন সমগ্র ইসলামী রাজ্যে যখন মুহাদ্দিছ হিসেবে ইমাম বুখারীর কথা ছড়িয়ে পড়ল তখন সেই যুগের বড় বড় মুহাদ্দিছগণ তাঁকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। তাই তিনি যখন বাগদাদে আগমণ করলেন তখন চারশত মুহাদ্দিছ একত্রিত হয়ে ১০০টি সহীহ হাদীছ নির্বাচন করে তার সনদ ও মতন পাল্টিয়ে দিয়ে ১০ ভাগে বিভক্ত করে দশজন মুহাদ্দিছের হাতে সোপর্দ করলেন। অতঃপর তাঁর জন্য হাদীছের মজলিস স্থাপন করা হলো। তিনি যখন আসন গ্রহণ করলেন তখন প্রথমে একজন মুহাদ্দিছ ১০টি হাদীছ নিয়ে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে একটি একটি করে সবগুলো হাদীছ পাঠ করে শেষ করলেন। প্রতিটি হাদীছ পড়া শেষ হলেই ইমাম বুখারী বলতেনঃ لاأعرفه অর্থাৎ এ ধরণের কোন হাদীছ আমার জানা নেই। এমনিভাবে ১০ জন বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ১০০টি হাদীছ তাঁর সামনে পাঠ করলেন। সকল হাদীছের ক্ষেত্রেই তিনি বার বার একই কথা বললেন। পরিশেষে তিনি সকলকে ডেকে উলটপালট কৃত হাদীছগুলোর প্রত্যেকটি হাদীছকে তার আসল সনদের দিকে ফিরিয়ে দিলেন এবং ঠিক করে দিলেন। হাদীছগুলোর সনদ থেকে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েনি এবং মতনসমূহ থেকে একটি শব্দও ছুটে যায় নি। এমনকি হাদীছগুলো সঠিকভাবে সাজানোতে মুহাদ্দিছগণ তাঁর কোন ভুল-ত্র“টি ধরতে পারেন নি। বলা হয় যে, সমরকন্দে যাওয়ার পরও তাঁকে একই নিয়মে পরীক্ষা করা হয়েছিল। এতে সেই যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ হিসেবে সকলেই তাঁকে স্বীকৃত প্রদান করলেন। ইমাম বুখারীর উস্তাদ ও ছাত্রগণঃ ইমাম বুখারী (রঃ) থেকে অসংখ্য মুহাদ্দিছ সহীহ বখারী বর্ণনা করেছেন। খতীব বাগদাদী (রঃ) বুখারীর অন্যতম রাবী ফিরাবরির বরাত দিয়ে বলেন যে, তার সাথে প্রায় সত্তর হাজার লোক ইমাম বুখারী থেকে সরাসরি সহীহ বুখারী পড়েছেন। তাদের মধ্যে আমি ছাড়া আর কেউ বর্তমানে জীবিত নেই। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম মুসলিম, ইমাম তিরমিজী, ইমাম নাসাঈ। তিনি যাদের কাছে হাদীছ শুনেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, ইসহাক বিন রাহওয়াই এবং আরও অনেকেই। তিনি আটবার বাগদাদে আগমণ করেছেন। প্রতিবারই তিনি আহমাদ বিন হাম্বালের সাথে দেখা করেছেন। প্রত্যেক সাক্ষাতের সময়ই ইমাম আহমাদ তাঁকে খোরাসান ছেড়ে দিয়ে বাগদাদে স্থায়ীভাবে বসবাস করার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। সহীহ বুখারী সংকলনের কারণঃ ইমাম বখারীর পূর্বে শুধু সহীহ হাদীছসমূহ একত্রিত করে কেউ কোন গ্রন্থ রচনা করেন নি। সহীহ বুখারী সংকলনের পূর্বে আলেমগণ সহীহ ও যঈফ হাদীছগুলোকে এক সাথেই লিখতেন। কিন্তু ইমাম বুখারীই সর্বপ্রথম যঈফ হাদীছ থেকে সহীহ হাদীছগুলোকে আলাদা করে লেখার কাজে অগ্রসর হন। তিনি তাঁর বিশিষ্ট উস্তাদ ইসহাক বিন রাহওয়াই হতে এই মহৎ কাজের অনুপ্রেরণা লাভ করেন। তিনি স্বয়ং বর্ণনা করেন যে, এক দিন আমি ইসহাক ইবনে রাহওয়াইয়ের মসজিদে বসা ছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যদি হাদীছের এমন একটি গ্রন্থ করতো, যাতে শুধু সহীহ হাদীছগুলোই স্থান পেতো তাহলে খুবই সুন্দর হতো। মজলিসে উপস্থিত সকলেই তাঁর কথা শুনলেও এ কাজে কেউ অগ্রসর হওয়ার সাহস পায় নি। ইসহাকের কথাগুলো ইমাম বুখারীর অন্তরে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল। তিনি সেই দিন হতেই এই মহান দায়িত্ব পালন করবেন বলে মনে মনে স্থির করলেন। তাঁর জীবনীতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, তিনি একবার স্বপ্নে দেখলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র শরীরে মাছি বসছে। তিনি এতে কষ্ট পাচ্ছেন। আর ইমাম বুখারী হাতে পাখা নিয়ে তাঁর পবিত্র শরীর থেকে মাছিগুলো তাড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি এই স্বপ্নের কথা সেই যুগের একাধিক আলেমের কাছে প্রকাশ করলে সকলেই বললেন যে, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছের সাথে যে সমস্ত জাল ও বানোয়াট হাদীছ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে তা থেকে সহীহ হাদীছগুলো আলাদা করবে। আলেমদের ব্যাখা শুনে সহীহ হাদীছ সম্বলিত একটি কিতাব রচনার প্রতি তাঁর আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পায়। Jamunanews24.com/JA/ 9 Sept-2013. - See more at: http://jamunanews24.com/index.php/islam-view/39253-2013-09-09-12-08-27.html#sthash.UawvLnnF.dpufPopular Bangladeshi online newspaper jamunanews24.com , online newspaper and website design by pqsit.com