ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের যত পদ্ধত
স্বাস্থ্যবার্তা
খবরটোয়েন্টিফোর.কম: জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের বিকল্প নেই। যুগের হাত ধরে বর্তমানে তাই ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের একাধিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, ব্যবহারবিধি, ঝুঁকি, মূল্য ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে বেছে নিতে পারেন এর যে কোনো একটি পদ্ধতি।
আচরণগত পদ্ধতি
পূর্ণাঙ্গ দৈহিক মিলন থেকে বিরত থাকা এ পদ্ধতির অন্তর্গত। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, কিছু ধর্মীয় গ্রুপ এ পদ্ধতি ব্যবহার করলেও বাস্তবতার নিরিখে এটা প্রায় অসম্ভব। তবে নিয়ন্ত্রিত দৈহিক মিলন এ ক্ষেত্রে একটি চমকপ্রদ পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এ পদ্ধতিতে বীর্যপাত হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে যোনিপথ থেকে পুরুষাঙ্গ সরিয়ে নেয়া। এতে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন হয় না। ফলে গর্ভ সঞ্চারের কোনো সুযোগও থাকে না। এ পদ্ধতিতে কোনো খরচ কিংবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকলেও এর প্রধান সমস্যা হলো ১৯ ভাগ ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি অকার্যকর। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণের ঝুঁকি অনেক বেশি। তাছাড়া এ পদ্ধতিতে যৌনবাহিত রোগও প্রতিরোধ করা যায় না।
প্রাকৃতিক ফ্যামিলি প্ল্যানিং
ন্যাচারাল বা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ফ্যামিলি প্ল্যানিং করা বেশ সুবিধাজনক। তিনভাবে ন্যাচারাল ফ্যামিলি প্ল্যানিং করা যায়। তার মধ্যে সেফ পিরিয়ড গণনা করে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কাপলের জন্য বেশ আকর্ষণীয় মনে হতে পারে। এ পদ্ধতিতে মহিলাদের পিরিয়ডের নিরাপদ সময় গণনা করা হয়।
সাধারণত মাসিক শুরু হওয়ার আগের নয়দিন, মাসিকের দিনগুলো এবং মাসিক পরবর্তী চারদিন নিরাপদ সময়ের অন্তর্গত। এ সময়ে দৈহিক মিলন হলেও গর্ভপাত সঞ্চারণের কোনো ঝুঁকি থাকে না। উল্লেখ্য, পিরিয়ডের সময় দৈহিক মিলন ইসলাম ধর্মে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাছাড়া বৈজ্ঞানিক দিক থেকেও এটা গ্রহণযোগ্য নয়। সে কারণে মাসিক শুরুর আগের নয়দিন এবং মাসিক পরবর্তী চারদিনেই সেফ পিরিয়ড বা নিরাপদ সময় হিসেবে গণ্য করতে হবে। অঙ্কের হিসেবেও নিরাপদ সময় বের করা যায়। ধরুন ২৮ দিন পরপর আপনার নিয়মিত মাসিক হয়। ২৮ থেকে প্রথমে ১৮ এবং পরে ১০ বাদ দিন (২৮-১৮=১০ এবং ২৮-১০=১৮)। অর্থাৎ মাসিক শুরু হওয়ার দিন থেকে নবম দিন পর্যন্ত আপনি নিরাপদ, দশম দিন থেকে ১৮তম দিন পর্যন্ত আপনি ঝুঁকিপূর্ণ এবং আবার ১৯তম দিন থেকে ২৮তম দিন পর্যন্ত আপনি নিরাপদ। অনেকের অনিয়মিত মাসিক হয়। ধরুন কোনো মাসে ৪৫ দিন পর এবং অন্য মাসে ২৬ দিন পর হয়। সে ক্ষেত্রে ৪৫ থেকে ১০ বাদ দিন (৪৫-১০=৩৫) এবং ২৬ থেকে ১৮ বাদ দিন (২৬-১৮=৮) অর্থাৎ মাসিক চক্রের অষ্টম দিন থেকে ৩৫তম দিন পর্যন্ত আপনি ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন। বাকি সময় মোটামুটি নিরাপদ।
ন্যাচারাল
ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের উপকারিতা
এ পদ্ধতিতে হরমোন ট্যাবলেট বা কোনো ডিভাইস ব্যবহার করতে হয় না। কোনো কোনো ধর্মে এ জাতীয় জিনিস ব্যবহার করাও নিষিদ্ধ। তাই তাদের ক্ষেত্রে ন্যাচারাল ফ্যামিলি প্ল্যানিংই একমাত্র পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তাছাড়া যারা সন্তান নিতে চান তাদেরও নিরাপদ সময় ও ঝুঁকিপূর্ণ সময় সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। কেননা একমাত্র ঝুঁকিপূর্ণ সময়ের দৈহিক সম্পর্ক আপনাকে পিতৃত্ব কিংবা মাতৃত্বের স্বাদ এনে দিতে পারে।
ন্যাচারাল
ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের অসুবিধা
প্রায় ২৫ ভাগ ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যর্থ।
যাদের অনিয়মিত মাসিক হয় তাদের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না।
এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হলে শিক্ষিত দম্পতি, কখনো কখনো ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
যৌনবাহিত রোগ প্রতিরোধে অক্ষম।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি। বহু বছর আগে থেকেই জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ধরনের পিল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে ওজন বৃদ্ধি, ব্রেস্টে ব্যথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে অনেকে পিল খেতে ভয় পান। আশার কথা হলো, বর্তমানে ব্যবহৃত পিলে এসব সমস্যা হয় না বললেই চলে।
পিল খাবারের পদ্ধতিটি মোটামুটি সবাই জানে। এক পাতাতে সাধারণত ৩০টি পিল থাকে। এর মধ্যে প্রথম ২১টিতে থাকে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নামক হরমোন এবং বাকি ৭টিতে কোনো হরমোন থাকে না, থাকে আয়রন। পিল ডিম্বাণুর পরিস্ফুটনে বাধা দেয়। ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে না।
পিলের সুবিধাসমূহ
জন্মনিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পিলের নানা সুবিধা রয়েছে। যেমন-
অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়মিতকরণে।
বাড়তি পিল গ্রহণের মাধ্যমে আপনি পিরিয়ডবিহীন ছুটি কাটাতে পারেন অথবা রমজান মাসে টানা একমাস রোজা রাখতে পারেন।
তলপেটের প্রদাহ, ব্রেস্টের কিছু রোগ, সিস্ট ইত্যাদি পিল গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়।
ডিম্বাশয় ও ইউটেরাসের বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে পিল সহায়তা প্রদান করে।
পিলের অসুবিধা
- বমি বমি ভাব।
-মাথাব্যথা।
- ব্রেস্টে ব্যথা।
-ওজন বৃদ্ধি।
- পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া।
- পিরিয়ডবিহীন ব্লিডিং।
- বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন।
- টেনশন।
-সেক্সুয়াল আগ্রহ কমে যাওয়া।
- প্রতিদিন একই সময় খেতে হয়।
বিশেষ কিছু ঝুঁকি
যেসব মহিলার রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি, যাদের ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন আছে এবং যারা কিছুটা স্থুলকায়, তাদের ক্ষেত্রে খাবার পিল স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
প্রমাণিত না হলেও ধারণা করা হয়, ব্রেস্ট ক্যান্সার কিংবা জরায়ু মুখের ক্যান্সার সৃষ্টিতে পিলের পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে।
মিনি পিল
এ পিলে শুধু প্রোজেস্টেরন নামক হরমোন ব্যবহার করা হয়। যেসব মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তারা মিনি পিল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও যারা ইস্ট্রোজেন সমৃদ্ধ পিল খেতে পারেন না, তারাও মিনি পিল খেতে পারেন।
পিল খেতে ভুলে গেলে কী করবেন
একটি বা দুটি পিল খেতে ভুলে গেলে মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি পিল খাবেন।একই সঙ্গে সেদিনের নিয়মিত পিল যথাসময়ে খাবেন। পরপর তিনদিন ভুলে গেলে জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্য কোনো পদ্ধতি যেমন-কনডম ব্যবহার করবেন এবং পিরিয়ড না হওয়া পর্যন্ত বাকি পিল খেয়ে যাবেন।
ইনজেকশন
ইনজেকশনে এক ধরনের সিনথেটিক হরমোন ব্যবহার করা হয়। বাণিজিক্যভাবে এটা ডিপো-প্রোভেরা নামে পরিচিত। একবার ইনজেকশন নিলে তিন মাস পর্যন্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ইনজেকশনের সুবিধা
খুবই কার্যকর একটি পদ্ধতি।
পিলের মতো এর ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
ইউটেরাস ও ওভারির ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।
অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়মিত করে।
ইনজেকশনের অসুবিধা
প্রথম বছরে কিছু মহিলার পিরিয়ড নাও হতে পারে।
ইনজেকশন বন্ধ করার পরও গর্ভধারণের জন্য কমপক্ষে এক বছর অপেক্ষা করতে হয়।
এছাড়া ওজন বৃদ্ধি, ডিপ্রেশন ইত্যাদি হতে পারে।
কনডম
এটা খুবই কার্যকর একটা পদ্ধতি। একমাত্র কনডমের মাধ্যমেই যৌনরোগ প্রতিরোধ করা যায়। বিয়ের প্রথম দিন থেকেই এটা ব্যবহার করা যায়। ঠিকমতো না পড়লে এটা ফেটে যেতে পারে এবং একমাত্র তখনই এটা ব্যর্থ হতে পারে। কনডমের সঙ্গে শুক্রাণুনাশী পদার্থ ব্যবহার করলে শতভাগ সফলতা পাওয়া যায়। তবে অনুভূতি কিছুটা কমে যাওয়ায় অনেকে এটা ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না-ও করতে পারেন।
জন্মনিয়ন্ত্রণের ভবিষ্যৎ পদ্ধতি
জন্মনিয়ন্ত্রণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত এবং শতভাগ কার্যকর একটা পদ্ধতি আবিষকারের চেষ্টা দীর্ঘদিনের। তাছাড়া এ পর্যন্ত জন্ম নিয়ন্ত্রণের যত পদ্ধতি আবিষকৃত হয়েছে তার সবকিছুই মহিলাকেন্দ্রিক। তাই খুব শিগগিরই বাজারে আসছে জন্মনিয়ন্ত্রণের বেশকিছু নতুন পদ্ধতি।
পুরুষের জন্য পিল
গসিপল নামক এ পিল খুব শিগগিরই বাজারে আসছে। এ পিলে স্টেরয়েড হরমোন থাকে, যা শুক্রাণুর ডেভেলপমেন্ট হতে দেয়া না।
পুরুষের জন্য ইনজেকশন
এটা তিন মাস অন্তর ব্যবহার করতে হয়। পুরুষদের যৌনাকাঙ্ক্ষা কমিয়ে দেয় বলে এটা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন