সাফল্যের ১০ মন্ত্র

আমরা প্রায়শই একটা কথা শুনতে পাই- ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’ আসলে সৌভাগ্য আর সাফল্য যেটাই বলি না কেন, পরিশ্রমের সাথে সাথে জানতে হয় সফলতার কিছু কৌশল। যা অনুসরণে নিশ্চিতভাবে পৌঁছে যেতে পারেন সাফল্যের স্বর্ণশিখরে। 

জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গের মতে, অধ্যাবসায়কে সুহৃদ, অভিজ্ঞতাকে বিজ্ঞ মন্ত্রনাদাতা, আত্মবিশ্বাস আর সীমাহীন স্বপ্ন যদি পথচলার সাথী হয় তাহলে সাফল্য সুনশ্চিত। তবে সাফল্য লাভের জন্য প্রয়োজন সঠিক প্রচেষ্টা। মানুষের সঠিক প্রচেষ্টা আর কিছু সাধারণ কৌশল এনে দিতে পারে সফলতা।

০১. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য 

আমরা বেশির ভাগ মানুষই জানি না যে, আসলে আমরা কী চাই। বা কোন চাওয়া নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে সন্তুষ্টও অর্জন করতে পারি না। কোন কাজের লক্ষ্য হতে হবে আপনার একান্ত কাম্য বা গভীর আগ্রহের বস্তু। লক্ষ্য হচ্ছে সাফল্যের সিঁড়িতে পৌঁছতে সহায়তা করবে। তাই আপনার লক্ষ্যকে মনের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করুন। 

০২. স্বপ্ন দেখুন 

বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন, ‘জ্ঞানের চেয়ে কল্পনার জোর অনেক বেশি।’ তাই আপনার লক্ষ্যকে স্বপ্নে পরিণত করুন। অর্থ্যাৎ আপনি যা হতে চান তার ছবি যদি স্পস্টভাবে দেখেন তাহলে তার বাস্তবায়ন সহজ হয়। আপনার সমস্ত মনোযোগ থাকবে ছবিটার দিকে। দিনে রাতে যখনই সময় পাবেন তখনই আপনার স্বপ্নের কথা ভাবুন। মনের আঙ্গিনায় স্বপ্নটাকে একেবারে স্পষ্ট করে ফেলুন। যাতে স্বপ্নের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে আপনি বাস্তবেও নিজেকে স্বার্থক হিসেবে দেখতে পান। যতো বাঁধাই আসুক, আপনি পৌঁছে যাবেন স্বপ্নলোকের সেই রাজপ্রাসাদে। 

০৩. আত্মবিশ্বাস 

সফলতার যদি কোনো অন্তরায় থাকে তাহলে তা হচ্ছে আত্মবিশ্বাসের অভাব। কেউ যদি ভাবে, আমি পারবো না’ ব্যস! নিশ্চিতভাবে সে ব্যর্থ। কারণ সে চেষ্টা করে না বা চেষ্টা করার আগেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। বিশ্বাসের মাত্রা হতে হয় কুব দৃঢ়। যদি মনে বিশ্বাস থাকে অটুট লক্ষ্য যতোই কঠিন হোক না কেন বিজয় নিশ্চিত। কখনোই বিশ্বাস হারাবেন না। তাহলে আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে যাবে। ফলে উৎসাহ উদ্দীপনা কমে যাবে। কাজেই বিশ্বাস ধরে রাখুন। নিজের মাঝে নিজেই প্রতিষ্ঠিত করুন যে- ‘আমি পারবোই।’ 

০৪. সুনিশ্চিত পরিকল্পনা 

সফলতা অর্জনের জন্য চাই সুচিন্তিত ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। যাকে আমরা অন্য কথায় নকঁশা বা মানচিত্রও বলতে পারি। এটি ছাড়া আপনি সফল হতে পারবেন না। আপনার অবস্থান ও আপনার কাঙিক্ষত গোলের অবস্থানের দূরত্বটা মাথায় রাখুন। এর মাঝে কিছু বাঁধা আসতে পারে। বাঁধাগুলোকে চিহ্নিত করুন। বাঁধাগুলো দূর করার উপায় বের করুন। ধরুন, আপনি প্রকৌশলী হতে চান। আপনার পরিকল্পনা হতে হবে প্রকৌশলী হওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া, প্রকৌশলী হতে ঠিক কতটা সময় লাগবে তা একটি বড় বিষয়, মনে করুন, আপনি একজন প্রকৌশলী হতে পাঁচ বচর সময় লাগবে, পুরে সময়টাকে সঠিকভাবে কাজে লাগান। এক্ষেত্রে সময়কে ভাগ ভাগ করে নিতে পারেন এবং সে অনুযায়ী এগুতে পারবেন। 

০৫. সক্রিয় কর্মতৎপরতা 

দক্ষতা বর্তমান কালে সফলতার অন্যতম নিয়ামক। দক্ষতা ও কর্মতৎপরতার মাঝে সামান্য পার্থক্য আছে। কর্মতৎপরতা হচ্ছে কাজটি সঠিকভাবে করে ফেলা, আর দক্ষতা হলো নিপুণভাবে কাজ করা। মোট কথা, সফল হতে চাইলে দুটোর’ই প্রয়োজন আছে। অর্থাৎ সকফল হতে আপনাকে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজে তৎপর হতে হবে। 

০৬. সময়ের সঠিক ব্যবহার 

অনেক ক্ষেত্রে আমরা আজকের কাজ কালকের জন্য ফেলে রাখি। আমাদের টনক না নড়া পর্যন্ত এই কাজটি আমরা বারবার করি। কিন্তু সময় তো আর বসে থাকে না। আমাদের খেয়াল হতে অনেক সময়ের অবমূল্যায়নের ফলে জীবনে নেমে আসে হতামা। আর জীবন সম্পর্কে অনীহা। আপনাকে মনে রাখতে হবে সফলতা সঠিক ব্যবহার করা প্রয়োজন। কারণ সাফল্যের জন্য আপনাকে শিখতে হয় অনেক কিছু। সব কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হলে সময়কে ভাগ করে নিন। 

০৭. ইতিবাচক মনোভাব 

আপনার লক্ষ্যের প্রতি থাকা চাই আপনার ইতিবাচক মনোভাব। এই মনোভাব আপনাকে সাফল্যের দিকে টানবে। যাদের কোন কাজে মন নেই বা নেতিবাচক মনোভাব আছে, তারা সফলতার সুখ দেখতে পান না। ইতিবাচক মনোভাব হচ্ছে আশা, সৃষ্টিশীলতা আর প্রাপ্তির সীমাহীন সম্ভাবনা। যারা নেতিবাচক চিন্তা করেন, তারা তাদের মনোভাব পরিবর্তন করুন। কোনো কাজকে পজেটিভ ভাবুন। একান্ত নিজের করে নিন, যদি দ্রুত পজেটিভ না হতে পারেন, তবে আস্তে আস্তে ইতিবাচক মনোভাব অর্জন করুন। 

০৮. মানুষের সাথে যোগাযোগ 

বর্তমান যোগাযোগের গুরুত্ব অনেক। আর বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগের খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয় না। তাই মানুষের সম্পর্ক একটা বড় বিষয়। মানুষ কখনোই একা চলতে পারে না। মানুষের বেঁচে থাকা, মানুষের চলাফেরা, কর্ম, সফলতা- সব ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোন না কোন মানুষ কিছুটা হলেও প্রভাবিত করছে। অর্থ্যাৎ মানুষের সফলতার পেছনে কোনোভাবে মানুষ প্রভাবিত করে। তাই প্রয়োজন সম্পর্ক। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অন্যের সাথে ইতিবাচক বা হ্যাঁ বোধক আলোচনা, কথা বার্তায় সহজ সরল ভাষা ব্যবহার, অন্যের ভালো কাজের স্বীকৃতি বা প্রশংসা, কথায় ও কাজে মিল রাখা, মানুষের সাতে মেশা এবং তাদের জানা। মানুষের সঠিক মূল্যায়ন ইত্যাদি বিষয় চর্চার মাধ্যমে আপনার যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। 

০৯. ধৈর্য্য ও মানসিক প্রশান্তি 

যদি সফল হতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে এবং কাজে মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে হবে। ধৈর্য্যশীলতা আপনাকে নতুন কাজের আগ্রহ জন্ম দিবে এবং প্রশান্তি বজায় থাকলে আপনি কাজটিকে আপনার এক ঘেঁয়ে মনে হবে না। অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতা আসতেই পারে, হাল ছাড়বেন না। ধৈর্য্য নিয়ে চেষ্টা করে যান। মনোবল নিয়ে কাজে নামুন। আমরা যদি মহাজ্ঞানীদের কথা ভাবি, নিউটনের কথাই ধরুন, যার গবেষনার সব কাগজ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। নিউটন হাল ছাড়েনি। এডিসন অসংখ্য চেস্টার পর ইলেকট্রিক বাল্ব আবিস্কার করতে পেরেছিলেন। ধৈর্য্যরে বলেই তা সম্ভব হয়েছে। মানসিক প্রশান্তি শুধু সাফল্য লাবের জন্যই নয় বরং সবক্ষেত্রেই প্রয়োজন। মানুষের মনের সুপ্ত শক্তিকে প্রকামের জন্য প্রয়োজন হয় এ প্রশান্তির। মোট কথা, এটি হচ্ছে সাফল্যের অন্যতম পূর্বশর্ত। কাজেই মনকে প্রশান্ত রাখুন। মানসিক প্রশান্তি অর্জনের একটি অন্যতম উপায় হলো মেডিটেশন। তাই মেডিটেশন করুন দেখবেন মনকে কিছুটা হলেও শান্তি দিতে পারছেন। 

১০. মেধা যাচাই 

ধরুন আপনি লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন। ধরেই নিন আপনি সফল। এরপর কি করা উচিত? আপনি কি বসে থাকবেন? তাহলে আপনি বুল করবেন। কারণ সাফল্যের শেষ নেই। সাফল্যের একটা সিঁড়ি অতিক্রম করার পর আপনি আরেকটা সিঁড়িতে পা দেবেন। কারণ আপনার মেধার কোনো কমতি নেই। লক্ষ্য অর্জনে মানুষের ক্ষমতার কোনো শেষ নেই। তাই নিজের মেধা যাচাই করুন। ধরা যাক আপনি ডাক্তার হতে চান। আপনার লক্ষ্য দেশের মানুষের সেবা করা। দেশের মানুষের সেবার মধ্য দিয়ে আপনি আনাকে সফল মানুষ হিসেবে দেখতে চান। আপনার সর্বোচ্চ মনোযোগ, সর্বোচ্চ মেধা দিয়ে আপনি মানুষের সেবার মাধ্যমে নিজেকে একজন সত্যিকার সফল মানুষ ভাবতে পারেন। আপনার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে, আপনার স্বপ্নকে আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করে সুনিশ্চিত পরিকল্পনা, কর্মতৎপরতা ও দক্ষতা রেখে সময়ের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের মেধাকে মূল্যায়ন করে একজন সফল ও স্বার্থক হোন। কাজের মাঝে ধৈর্য রাখুন, মানসিক প্রশান্তি রাখুন, দেখবেন সাফল্য সুনিশ্চিত, আপনার ইতিবাচক মনোবাব ও মানুষের সাথে সুম্পর্ক আপনাকে নিয়ে যাবে সফলতার স্বর্ণশিখরে। 

লক্ষ্য করুন 

০ কোনো কাজে একবার ব্যর্থ হলে ভেঙে পড়লে চলবে না, পুনরায় চেস্টা করুন। 

০ সব সময় ইতবাচক মানসিকতার অনুশীলন করে তাদের সাহচর্য বজায় রাখুন। 

০ সাফল্যকে একবার করায়ত্ব করলেই দায়িত্ব শেষ নয়, কারণ সাফল্যের শেষ নেই। 

০ সময়ের কাজ সময়ে শেষ করুন। 

০ কোন কাজ আগামীর জন্য ফেলে রাখবেন না। 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

যমুনা নিউজ : ‘ইমাম বুখারী’ কাল প্রবাহে একটি বিস্ময়ের নাম। স্মৃতির প্রখরতা, জ্ঞানের গভীরতা, চিন্তার বিশালতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, অটুট সততা আর বিশাল পর্বত সম হিম্মতের এক মূর্ত প্রতীক এই মহাপুরুষ। তিনি ইলমে হাদীসের এক বিজয়ী সম্রাট। তার সংকলিত হাদীসের মহামূল্যবান সংকলন সহীহুল বুখারী বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে আল্লাহর কিতাব মহা গ্রন্থ আল কুরআনের পরেই যার অবস্থান। কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম উম্মাহ তার সাধনার কাছে ঋণী। আসুন, খুব সংক্ষেপে আমরা এই মনিষীকে জানার চেষ্টা করি। নাম, জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ তিনি হচ্ছেন সমকালীন মুহাদ্দিছদের ইমাম হাফেয আবু আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরা বিন বারদিযবাহ আলজু’ফী। তাঁকে আমীরুল মুমিনীন ফীল হাদীছও বলা হয়। ১৯৪ হিঃ সালের ১৩ই শাওয়াল জুমআর রাত্রিতে তিনি বুখারায় জন্ম গ্রহণ করেন। শৈশব কাল ও জ্ঞান অর্জনঃ শিশুকালেই তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন। পিতার মৃত্যুর পর মাতার তত্বাবধানে তিনি প্রতিপালিত হন। দশ বছর বয়সে উপনীত হয়ে তিনি জ্ঞান চর্চার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। অল্প বয়সেই তিনি পবিত্র কুরআন মুখস্ত করেন। শৈশব কালে মক্তবে লেখাপড়া করার সময়ই আল্লাহ্ তাঁর অন্তরে হাদীছ মুখস্ত ও তা সংরক্ষণ করার প্রতি আগ্রহ ও ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন। ১৬ বছর বয়সেই হাদীছের প্রসিদ্ধ কিতাবগুলো পাঠ সমাপ্ত করেন। তাঁর জীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি ছোট থাকতেই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এতে তাঁর মাতা আল্লাহর কাছে খুব ক্রন্দন করলেন এবং স্বীয় সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফেরত দেয়ার জন্য তাঁর কাছে অবিরাম দুআ করে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ এক দিন তাঁর মা স্বপ্নে দেখলেন যে আল্লাহর নবী ইবরাহীম (আঃ) তাঁকে লক্ষ্য করে বলছেনঃ ওহে! তোমার সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফেরত চেয়ে আল্লাহর দরবারে তোমার ক্রন্দনের কারণে তিনি তোমার সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তখন তিনি প্রকৃত ঘটনা যাচাই করার জন্য স্বীয় সন্তানের কাছে গিয়ে দেখেন সত্যিই তাঁর সন্তান সম্পূর্ণ দৃষ্টি শক্তি ফেরত পেয়েছে। ইমাম বুখারীর স্মরণ শক্তির প্রখরতাঃ ১৮ বছর বয়সে তিনি হজ্জ পালনের জন্য মক্কায় গমণ করেন। মক্কায় অবস্থান করে তিনি ইলমে হাদীছের চর্চা শুরু করেন। অতঃপর তিনি এই উদ্দেশ্যে অন্যান্য দেশ ভ্রমণ করেন এবং এক হাজারেরও অধিক সংখ্যক মুহাদ্দিছের নিকট তেকে হাদীছ সংগ্রহ করেন। জ্ঞান অর্জনের জন্য সারা রাত জেগে তিনি অত্যন্ত কঠিন পরিশ্রম করতেন। তাঁর স্মৃতি শক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। বলা হয় যে তিনি সনদসহ ছয় লক্ষ হাদীছের হাফেয ছিলেন। আলেমগণ তাঁর জীবনীতে উল্লেখ করেছেন, যে কোন কিতাবে একবার দৃষ্টি দিয়েই তিনি তা মুখস্ত করে নিতেন। তাঁর জীবনীতে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি যখন বসরার মুহাদ্দিছদের হাদীছের ক্লাশে হাজীর হতেন তখন অন্যান্য ছাত্রগণ খাতা-কলম নিয়ে বসে উস্তাদের নিকট থেকে হাদীছ শুনতেন এবং প্রতিটি হাদীছই লিখে ফেলতেন। কিন্তু ইমাম বুখারী তা করতেন না। কয়েক দিন পর তাঁর সাথীগণ জিজ্ঞেস করলঃ আপনি শুধু আমাদের সাথে বসে থাকেন কেন? হাদীছগুলো না লেখার কারণই বা কি? এভাবে সময় নষ্ট করে লাভ কি? বন্ধুরা যখন পিড়াপিড়ি করতে থাকলো তখন ১৬ দিন পর তিনি বললেনঃ আপনারা আমার নিকট বারবার একই প্রশ্ন করছেন। আপনারা যে সমস্ত হাদীছ লিখেছেন তা আমাকে পড়ে শুনান। বন্ধুরা তা দেখানোর পর তিনি সমস্ত হাদীছ মুখস্ত শুনিয়ে দিলেন এবং আরও অতিরিক্ত পনের হাজার হাদীছ শুনালেন। অতঃপর তাঁর সাথীগণ তাদের কাছে রক্ষিত কিতাবের হাদীছগুলো ইমাম বুখারীর মুখস্ত কৃত হাদীছের সাথে মিলিয়ে ভুল-ভ্রান্তি ঠিক করে নিলেন। অতঃপর তিনি বন্ধুদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ এরপরও কি তোমরা বলবে যে, আমি এখানে অযথা সময় নষ্ট করছি? সে দিন থেকেই হাদীছ শাস্ত্রে তারা ইমাম বুখারীকে প্রাধান্য দেয়া শুরু করলেন। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেনঃ আমার অন্তরে এক লক্ষ সহীহ হাদীছ ও দুই লক্ষ যঈফ হাদীছ মুখস্ত রয়েছে। সহীহ বুখারীর অন্যতম ভাষ্যকার কুস্তুলানীর বক্তব্য অনুযায়ী তিনি ছয় লক্ষ হাদীছের হাফেয ছিলেন। মুহাদ্দিছ ইবনে খুযায়মা (রঃ) বলেনঃ পৃথিবীতে ইমাম বুখারী অপেক্ষা অধিক অভিজ্ঞ এবং হাদীছের হাফেয আর কেউ জন্ম গ্রহণ করে নি। কেউ কেউ বলেনঃ খোরাসানের যমীনে ইমাম বুখারীর মত আর কেউ জন্ম গ্রহণ করে নি। ইমাম বুখারীর বাল্যকালের একটি ঘটনা অত্যন্ত চমকপ্রদ। তখন তিনি দশ বছর বয়সের কিশোর। এ সময় তদানীন্তন শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ ইমাম দাখিলীর ক্লাশে হাদীছের পাঠ গ্রহণ করছিলেন। মুহাদ্দিছ দাখিলী এই সনদে একটি হাদীছ উপস্থাপন করলেনঃ سفيان عن أبي إبي الزبير عن إبراهيم “সুফিয়ান বর্ণনা করেন আবুয্ যুবাইর হতে আর আবুয যুবাইর বর্ণনা করেন ইবরাহমী হতে।” বালক বুখারী প্রতিবাদ করে বললেনঃ আবুয যুবাইর ইবরাহীম হতে হাদীছ হাদীছটি বর্ণনা করেন নি। মুহাদ্দিছ দাখিলী তাঁকে ধমক দিয়ে বললেও তিনি প্রশান্ত চিত্তে বললেনঃ أبو الزبير عن إبراهيم নয়: বরং زبير بن عدي عن إبراهيم আপনি দয়া করে একবার আপনার পান্ডুলিপির সাথে মিলিয়ে দেখুন। অতিরিক্ত জোর দেয়ার কারণে উস্তাদের মনে সংশয় দেখা দিল। তিনি পান্ডুলিপি দেখে ইমাম বুখারীকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমার কথাই ঠিক। তখন মুহাদ্দিছ দাখিলী তার জন্য প্রাণ খুলে দুআ করলেন। হাদীছ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দেশ ভ্রমণঃ হাদীছ সংগ্রহের জন্য ইমাম বুখারী অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। সে সময় যে সমস্ত দেশে বিজ্ঞ মুহাদ্দিছগণ বসবাস করতেন তার প্রায় সবগুলোতেই তিনি ভ্রমণ করেছেন এবং তাদের নিকট থেকে হাদীছ সংগ্রহ করেছেন। খোরাসানের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও তিনি যে সমস্ত দেশে ভ্রমণ করেছেন তার মধ্যে রয়েছে মক্কা, মদীনা, ইরাক, হিজাজ, সিরিয়া, মিশর এবং আরও অনেক শহর। বাগদাদে আগমণ ও তাঁর স্মরণ শক্তির পরীক্ষাঃ তৎকালীন সমগ্র ইসলামী রাজ্যে যখন মুহাদ্দিছ হিসেবে ইমাম বুখারীর কথা ছড়িয়ে পড়ল তখন সেই যুগের বড় বড় মুহাদ্দিছগণ তাঁকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। তাই তিনি যখন বাগদাদে আগমণ করলেন তখন চারশত মুহাদ্দিছ একত্রিত হয়ে ১০০টি সহীহ হাদীছ নির্বাচন করে তার সনদ ও মতন পাল্টিয়ে দিয়ে ১০ ভাগে বিভক্ত করে দশজন মুহাদ্দিছের হাতে সোপর্দ করলেন। অতঃপর তাঁর জন্য হাদীছের মজলিস স্থাপন করা হলো। তিনি যখন আসন গ্রহণ করলেন তখন প্রথমে একজন মুহাদ্দিছ ১০টি হাদীছ নিয়ে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে একটি একটি করে সবগুলো হাদীছ পাঠ করে শেষ করলেন। প্রতিটি হাদীছ পড়া শেষ হলেই ইমাম বুখারী বলতেনঃ لاأعرفه অর্থাৎ এ ধরণের কোন হাদীছ আমার জানা নেই। এমনিভাবে ১০ জন বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ১০০টি হাদীছ তাঁর সামনে পাঠ করলেন। সকল হাদীছের ক্ষেত্রেই তিনি বার বার একই কথা বললেন। পরিশেষে তিনি সকলকে ডেকে উলটপালট কৃত হাদীছগুলোর প্রত্যেকটি হাদীছকে তার আসল সনদের দিকে ফিরিয়ে দিলেন এবং ঠিক করে দিলেন। হাদীছগুলোর সনদ থেকে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েনি এবং মতনসমূহ থেকে একটি শব্দও ছুটে যায় নি। এমনকি হাদীছগুলো সঠিকভাবে সাজানোতে মুহাদ্দিছগণ তাঁর কোন ভুল-ত্র“টি ধরতে পারেন নি। বলা হয় যে, সমরকন্দে যাওয়ার পরও তাঁকে একই নিয়মে পরীক্ষা করা হয়েছিল। এতে সেই যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ হিসেবে সকলেই তাঁকে স্বীকৃত প্রদান করলেন। ইমাম বুখারীর উস্তাদ ও ছাত্রগণঃ ইমাম বুখারী (রঃ) থেকে অসংখ্য মুহাদ্দিছ সহীহ বখারী বর্ণনা করেছেন। খতীব বাগদাদী (রঃ) বুখারীর অন্যতম রাবী ফিরাবরির বরাত দিয়ে বলেন যে, তার সাথে প্রায় সত্তর হাজার লোক ইমাম বুখারী থেকে সরাসরি সহীহ বুখারী পড়েছেন। তাদের মধ্যে আমি ছাড়া আর কেউ বর্তমানে জীবিত নেই। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম মুসলিম, ইমাম তিরমিজী, ইমাম নাসাঈ। তিনি যাদের কাছে হাদীছ শুনেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, ইসহাক বিন রাহওয়াই এবং আরও অনেকেই। তিনি আটবার বাগদাদে আগমণ করেছেন। প্রতিবারই তিনি আহমাদ বিন হাম্বালের সাথে দেখা করেছেন। প্রত্যেক সাক্ষাতের সময়ই ইমাম আহমাদ তাঁকে খোরাসান ছেড়ে দিয়ে বাগদাদে স্থায়ীভাবে বসবাস করার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। সহীহ বুখারী সংকলনের কারণঃ ইমাম বখারীর পূর্বে শুধু সহীহ হাদীছসমূহ একত্রিত করে কেউ কোন গ্রন্থ রচনা করেন নি। সহীহ বুখারী সংকলনের পূর্বে আলেমগণ সহীহ ও যঈফ হাদীছগুলোকে এক সাথেই লিখতেন। কিন্তু ইমাম বুখারীই সর্বপ্রথম যঈফ হাদীছ থেকে সহীহ হাদীছগুলোকে আলাদা করে লেখার কাজে অগ্রসর হন। তিনি তাঁর বিশিষ্ট উস্তাদ ইসহাক বিন রাহওয়াই হতে এই মহৎ কাজের অনুপ্রেরণা লাভ করেন। তিনি স্বয়ং বর্ণনা করেন যে, এক দিন আমি ইসহাক ইবনে রাহওয়াইয়ের মসজিদে বসা ছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যদি হাদীছের এমন একটি গ্রন্থ করতো, যাতে শুধু সহীহ হাদীছগুলোই স্থান পেতো তাহলে খুবই সুন্দর হতো। মজলিসে উপস্থিত সকলেই তাঁর কথা শুনলেও এ কাজে কেউ অগ্রসর হওয়ার সাহস পায় নি। ইসহাকের কথাগুলো ইমাম বুখারীর অন্তরে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল। তিনি সেই দিন হতেই এই মহান দায়িত্ব পালন করবেন বলে মনে মনে স্থির করলেন। তাঁর জীবনীতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, তিনি একবার স্বপ্নে দেখলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র শরীরে মাছি বসছে। তিনি এতে কষ্ট পাচ্ছেন। আর ইমাম বুখারী হাতে পাখা নিয়ে তাঁর পবিত্র শরীর থেকে মাছিগুলো তাড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি এই স্বপ্নের কথা সেই যুগের একাধিক আলেমের কাছে প্রকাশ করলে সকলেই বললেন যে, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছের সাথে যে সমস্ত জাল ও বানোয়াট হাদীছ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে তা থেকে সহীহ হাদীছগুলো আলাদা করবে। আলেমদের ব্যাখা শুনে সহীহ হাদীছ সম্বলিত একটি কিতাব রচনার প্রতি তাঁর আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পায়। Jamunanews24.com/JA/ 9 Sept-2013. - See more at: http://jamunanews24.com/index.php/islam-view/39253-2013-09-09-12-08-27.html#sthash.UawvLnnF.dpufPopular Bangladeshi online newspaper jamunanews24.com , online newspaper and website design by pqsit.com