সাংবাদিকতা পেশা: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
তথ্য প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি ও উৎকর্সের সুবাদে একুশ শতকে এসে দ্রুতই বদলে যাচ্ছে মানব সভ্যতার দৃশ্যপট। নতুন সহস্রাব্দের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও প্রচলিত ধারণা ও কৌশলগুলোতে এসেছে নানা পরিবর্তন।
উদ্ভব ও বিকাশের কালপরিক্রমায় আমাদের দেশে সাংবাদিকতা বলতে একুশ শতকের আগ পর্যন্ত মূলত সংবাদপত্রকেন্দ্রিক রিপোর্টিং তৎপরতাই ছিল মুখ্য প্রবণতা। স্বাভাবিকভাবেই বর্তমানে এদেশে সাংবাদিকতায় যারা দিকপাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত তাদের অধিকাংশই সংবাদপত্রকেন্দ্রিক রিপোর্টিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়েই এ পর্যন্ত এসেছেন।
সাম্প্রতিককালে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার নতুন নতুন শাখায় রিপোর্টিং করার অবারিত সুযোগ-সুবিধা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিগত শতকের সংবাদপত্রের কার্যক্রম ছিল কাগজ, কলম, নোটবুক আর ম্যানুয়াল ক্যামেরা নির্ভর।
একুশ শতকে এসে তথ্য-প্রযুক্তির সুবাদে কাগজ, কলম, প্যাড, নোটবুক আর সনাতনী ক্যামেরার স্থান বদলে দিয়েছে ল্যাপটপ কম্পিউটার, ডিজিটাল ক্যামেরা, এমনকি মোবাইল ফোন ও মাল্টিমিডিয়া নির্ভর যন্ত্রকৌশল।
আর ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে’র কাগজ-ছাপাখানাহীন অনলাইন নিউজপেপারের তো কোন জুড়ি নেই। তথ্য-প্রযুক্তির অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে একটি সংবাদপত্র এখন একশভাগ ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে আত্মপ্রকাশের বাস্তবতা অর্জন করেছে।
ফলে সাংবাদিকতার সনাতনী ধ্যানধারনায় এসেছে নানা পরিবর্তন। দিনে দিনে পার্থক্য ঘুচে যাচ্ছে মুদ্রণ ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের সংবাদ সংগ্রহ ও সম্পাদনা কার্যক্রমে।
বলা হয়ে থাকে, সাংবাদিকতার বর্তমান যুগ ‘মেড জার্নালিস্ট’ (গধফব ঔড়ঁৎহধষরংঃ)-এর যুগ; সঙ্গতকারণে সাংবাদিকতা এখন আর সহজাত নয়-অর্জিত; অর্থাৎ এ যুগে সাংবাদিক হতে গেলে তাকে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় দিকেই যথেষ্ট যতœবান ও মনোযোগী হতে হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে যথেষ্ট শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ আয়ত্ত করে ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন করে ধাপে ধাপে তাকে এগিয়ে যেতে হবে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে। কিন্তু এ শতকের আগে সাংবাদিকতা ছিল মূলত ‘র্বন জার্নালিস্টদের’ (ঔড়ঁৎহধষরংঃং) নিয়ন্ত্রণে। জন্মগত প্রতিভা নিয়েই বিগত শতকের এক একজন সাংবাদিক মহীরুহ হিসেবে আপন ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। সাংবাদিকতার ইতিহাসে আজ তারা পথিকৃৎ সাংবাদিক হিসেবে আপন মহিমায় ভাস্বর।
পরিবর্তিত বিশ্ব বাস্তবতায় এ প্রজন্মের একজন চৌকস সাংবাদিক হতে গেলে প্রথমেই তাকে যে শর্তটি পূরণ করতে হবে তাহলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি যাই থাকুক না কেন প্রথমেই তাকে হতে হবে ‘কম্পিউটার লিটারেট’।
আমাদের দেশে এতকাল ফোন, ফ্যাক্স আর ডাক বিভাগের নির্ভরতা ও বিড়ম্বনা মেনে নিয়েই গ্রামীণ বা আঞ্চলিক সংবাদদাতাদের পাঠানো সংবাদ সংগ্রহের ওপর সন্তুষ্ট থাকতে হতো।
কিন্তু বর্তমানে সে অবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে; এখন কী শহর কী গ্রাম-সর্বত্রই সাংবাদিকের জীবনে তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দিয়েই যুক্ত হয়েছে ইন্টারনেট ও অত্যাধুনিক টেলিযোগ ব্যবস্থা।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সম্প্রতি ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ঘটনার তথ্য ও ছবি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকায় পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। এ সময়ের দক্ষ ও স্মার্ট সাংবাদিকের হাতে উঠে এসেছে ল্যাপটপ অথবা পকেট পিসি যা নিশ্চিতভাবে আগামী দিনগুলোতে গুণে ও মানে আজকের সেলফোন মাধ্যমটির জায়গাটি পুরোপুরি সমন্বয় করে নিতে সক্ষম হবে।
বিশ্বের সর্বত্র স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ও ফাইবার অপটিক্যাল যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত হলে ডিজিটাল যুগের ‘তথ্য সমাজ জীবনে’ অদূর ভবিষ্যতে ইলেকট্রনিক সাংবাদিতাকে আমরা আরও ধাপে ধাপে এগিয়ে নিতে সক্ষম হব।
তবে এসব সম্ভাবনার উল্টোপিঠে কিছু অনিবার্য জিজ্ঞাসা থেকে যাবে হয়ত। প্রশ্ন উঠতে পারে বিশ্বায়নের বর্তমান পৃথিবীতে ‘ক্যারিয়ার’ হিসেবে সাংবাদিকতা পেশা কতটা নিরাপদ? কেননা, এদেশে সাংবাদিকতা পেশাটি যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হিসেবে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
এই পেশা একজন নবীন সাংবাদিকের ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক জীবনে কতটুকু সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারবে? এসব প্রশ্নের উত্তরে গ্যারান্টি দেবার মতো কোন সুরক্ষা ব্যবস্থা আপাতত নেই।
তবে সান্ত্বনা দেবার কথা হলো-সংবাদক্ষেত্র, সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ মাধ্যমের বিকাশের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ এই মুহূর্তে বিশ্বমান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে দেশে এখন সর্বাধিকসংখ্যক সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। সাম্প্রতিককালের ইলেকট্রনিক মাধ্যমগুলোও সংখ্যাত্মক ও গুণাত্মক মানে ঈর্ষণীয় সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
আর তাই সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যমের সাম্প্রতিক এসব অর্জনকে সম্ভব করে তুলেছেন এ প্রজন্মেরই সাংবাদিকবৃন্দ যারা মনে করছেন অন্য যে কোন পেশার চেয়ে সাংবাদিকতা পেশায় তারা এখন বেশি স্বচ্ছন্দ ও সফল।
আত্মমর্যাদা, সম্মান ও সম্মানীর বিবেচনায় এ প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা সম্ভবত সে কারণেই ক্যারিয়ার হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নিতে আগ্রহবোধ করছেন। আর এর বড় প্রমাণ হলো প্রচার সংখ্যায় শীর্ষে থাকা পত্রিকাগুলো এবং সাম্প্রতিককালের দর্শকপ্রিয়া টিভি চ্যানেলগুলো।
একজন আদর্শ সাংবাদিকের বাস্তবজীবনে সম্মান ও অসম্মানের সিক্ত ও তিক্ত অভিজ্ঞতা দুই-ই মেলে প্রচুর। তার কাছে পৃথিবীর তাবৎ আগ্নেয়াস্ত্রের চেয়ে একটি শাণিত কলম অধিক শক্তিশালী।
পেশাগত জীবনে তাকে অর্জন করতে হয় মানুষের জীবনের বিচিত্র অনুভূতি সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান এবং আয়ত্ত করতে হয় সীমাহীন ধৈর্য্য ও মনোবল। আর সবচেয়ে বড় কথা তার অভিধানে ‘ব্যর্থতা’ শব্দটি খুঁজে পাওয়া ভার।
প্রতিদান-প্রত্যাশাহীন এই সংবাদশিল্পীর কর্মজীবনে আপন নেশায় কাজ করতে করতে এক সময় দুর্গম-দুস্তর পথের ওপাড়ে হয়ত তার জন্যে অপেক্ষা করবে সাফল্যের নানা স্বীকৃতি, পুরস্কার ও বিরল সম্মান।
আর তাই নির্ভেজাল দেশপ্রেম ও সমাজ সংস্কারের মহৎ ব্রত নিয়ে এ পেশায় শামিল হতে হবে এ প্রজন্মের একজন প্রত্যয়ী সংবাদকর্মীকে। আমার বিশ্বাস, এ প্রজন্মের প্রত্যয়ী একজন কলম সৈনিকই পারেন তার শাণিত চেতনার অগ্নিমশাল জ্বালিয়ে আলোকিত করতে অন্যায়, অপরাধ আর দুর্নীতির বিষবাস্পে ভরা চার পাশের অন্ধকার পরিমন্ডলকে।
তাছাড়া, সত্যিকার অর্থে সাংবাদিকতা এমনই একটি মহৎ পেশা যেখানে একজন সৎ ও পেশাদার সাংবাদিক সমাজ, দেশ তথা জাতির উন্নয়ন-অগ্রগতিতে অনেক কিছুই দিয়ে যান নীরবে-নির্ভতে।
কিন্তু তার যথার্থ প্রতিদান হিসেব না করেই তা তিনি করে যান। খবরের পেছনের খবর সংগ্রহে, ঘটনার নেপথ্য ঘটনার অনুসন্ধানে প্রতিনিয়ত একজন সাংবাদিককে রকমারি বিরূপ বাস্তবতা ও সীমাহীন ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ উৎসের পিছনে ছুটতে হয়।
বোমা বিস্ফোরণ, মিছিল, গুলি, মারামারি, অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প, নৌদুর্ঘটনা, বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস থেকে শুরু করে যুদ্ধক্ষেত্রে পর্যন্ত সর্বত্র তার যেন ক্লান্তিহীন ছুটে চলা। আর পদে পদে তার সামনে রয়েছে ঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতা।
সে কারণে একমাত্র তার পক্ষেই সম্ভব এই পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করা-যার আছে প্রত্যয়ী বিশ্বাস, সামাজিক অঙ্গীকার, দুর্বার মনোবল, ‘প্রতিদান-প্রত্যাশাহীন কর্মস্পৃহা’ এবং সর্বোপরি খাঁটি দেশপ্রেম।
উদ্ভব ও বিকাশের কালপরিক্রমায় আমাদের দেশে সাংবাদিকতা বলতে একুশ শতকের আগ পর্যন্ত মূলত সংবাদপত্রকেন্দ্রিক রিপোর্টিং তৎপরতাই ছিল মুখ্য প্রবণতা। স্বাভাবিকভাবেই বর্তমানে এদেশে সাংবাদিকতায় যারা দিকপাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত তাদের অধিকাংশই সংবাদপত্রকেন্দ্রিক রিপোর্টিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়েই এ পর্যন্ত এসেছেন।
সাম্প্রতিককালে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার নতুন নতুন শাখায় রিপোর্টিং করার অবারিত সুযোগ-সুবিধা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিগত শতকের সংবাদপত্রের কার্যক্রম ছিল কাগজ, কলম, নোটবুক আর ম্যানুয়াল ক্যামেরা নির্ভর।
একুশ শতকে এসে তথ্য-প্রযুক্তির সুবাদে কাগজ, কলম, প্যাড, নোটবুক আর সনাতনী ক্যামেরার স্থান বদলে দিয়েছে ল্যাপটপ কম্পিউটার, ডিজিটাল ক্যামেরা, এমনকি মোবাইল ফোন ও মাল্টিমিডিয়া নির্ভর যন্ত্রকৌশল।
আর ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে’র কাগজ-ছাপাখানাহীন অনলাইন নিউজপেপারের তো কোন জুড়ি নেই। তথ্য-প্রযুক্তির অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে একটি সংবাদপত্র এখন একশভাগ ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে আত্মপ্রকাশের বাস্তবতা অর্জন করেছে।
ফলে সাংবাদিকতার সনাতনী ধ্যানধারনায় এসেছে নানা পরিবর্তন। দিনে দিনে পার্থক্য ঘুচে যাচ্ছে মুদ্রণ ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের সংবাদ সংগ্রহ ও সম্পাদনা কার্যক্রমে।
বলা হয়ে থাকে, সাংবাদিকতার বর্তমান যুগ ‘মেড জার্নালিস্ট’ (গধফব ঔড়ঁৎহধষরংঃ)-এর যুগ; সঙ্গতকারণে সাংবাদিকতা এখন আর সহজাত নয়-অর্জিত; অর্থাৎ এ যুগে সাংবাদিক হতে গেলে তাকে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় দিকেই যথেষ্ট যতœবান ও মনোযোগী হতে হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে যথেষ্ট শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ আয়ত্ত করে ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন করে ধাপে ধাপে তাকে এগিয়ে যেতে হবে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে। কিন্তু এ শতকের আগে সাংবাদিকতা ছিল মূলত ‘র্বন জার্নালিস্টদের’ (ঔড়ঁৎহধষরংঃং) নিয়ন্ত্রণে। জন্মগত প্রতিভা নিয়েই বিগত শতকের এক একজন সাংবাদিক মহীরুহ হিসেবে আপন ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। সাংবাদিকতার ইতিহাসে আজ তারা পথিকৃৎ সাংবাদিক হিসেবে আপন মহিমায় ভাস্বর।
পরিবর্তিত বিশ্ব বাস্তবতায় এ প্রজন্মের একজন চৌকস সাংবাদিক হতে গেলে প্রথমেই তাকে যে শর্তটি পূরণ করতে হবে তাহলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি যাই থাকুক না কেন প্রথমেই তাকে হতে হবে ‘কম্পিউটার লিটারেট’।
আমাদের দেশে এতকাল ফোন, ফ্যাক্স আর ডাক বিভাগের নির্ভরতা ও বিড়ম্বনা মেনে নিয়েই গ্রামীণ বা আঞ্চলিক সংবাদদাতাদের পাঠানো সংবাদ সংগ্রহের ওপর সন্তুষ্ট থাকতে হতো।
কিন্তু বর্তমানে সে অবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে; এখন কী শহর কী গ্রাম-সর্বত্রই সাংবাদিকের জীবনে তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দিয়েই যুক্ত হয়েছে ইন্টারনেট ও অত্যাধুনিক টেলিযোগ ব্যবস্থা।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সম্প্রতি ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ঘটনার তথ্য ও ছবি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকায় পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। এ সময়ের দক্ষ ও স্মার্ট সাংবাদিকের হাতে উঠে এসেছে ল্যাপটপ অথবা পকেট পিসি যা নিশ্চিতভাবে আগামী দিনগুলোতে গুণে ও মানে আজকের সেলফোন মাধ্যমটির জায়গাটি পুরোপুরি সমন্বয় করে নিতে সক্ষম হবে।
বিশ্বের সর্বত্র স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ও ফাইবার অপটিক্যাল যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত হলে ডিজিটাল যুগের ‘তথ্য সমাজ জীবনে’ অদূর ভবিষ্যতে ইলেকট্রনিক সাংবাদিতাকে আমরা আরও ধাপে ধাপে এগিয়ে নিতে সক্ষম হব।
তবে এসব সম্ভাবনার উল্টোপিঠে কিছু অনিবার্য জিজ্ঞাসা থেকে যাবে হয়ত। প্রশ্ন উঠতে পারে বিশ্বায়নের বর্তমান পৃথিবীতে ‘ক্যারিয়ার’ হিসেবে সাংবাদিকতা পেশা কতটা নিরাপদ? কেননা, এদেশে সাংবাদিকতা পেশাটি যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হিসেবে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
এই পেশা একজন নবীন সাংবাদিকের ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক জীবনে কতটুকু সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারবে? এসব প্রশ্নের উত্তরে গ্যারান্টি দেবার মতো কোন সুরক্ষা ব্যবস্থা আপাতত নেই।
তবে সান্ত্বনা দেবার কথা হলো-সংবাদক্ষেত্র, সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ মাধ্যমের বিকাশের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ এই মুহূর্তে বিশ্বমান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে দেশে এখন সর্বাধিকসংখ্যক সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। সাম্প্রতিককালের ইলেকট্রনিক মাধ্যমগুলোও সংখ্যাত্মক ও গুণাত্মক মানে ঈর্ষণীয় সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
আর তাই সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যমের সাম্প্রতিক এসব অর্জনকে সম্ভব করে তুলেছেন এ প্রজন্মেরই সাংবাদিকবৃন্দ যারা মনে করছেন অন্য যে কোন পেশার চেয়ে সাংবাদিকতা পেশায় তারা এখন বেশি স্বচ্ছন্দ ও সফল।
আত্মমর্যাদা, সম্মান ও সম্মানীর বিবেচনায় এ প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা সম্ভবত সে কারণেই ক্যারিয়ার হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নিতে আগ্রহবোধ করছেন। আর এর বড় প্রমাণ হলো প্রচার সংখ্যায় শীর্ষে থাকা পত্রিকাগুলো এবং সাম্প্রতিককালের দর্শকপ্রিয়া টিভি চ্যানেলগুলো।
একজন আদর্শ সাংবাদিকের বাস্তবজীবনে সম্মান ও অসম্মানের সিক্ত ও তিক্ত অভিজ্ঞতা দুই-ই মেলে প্রচুর। তার কাছে পৃথিবীর তাবৎ আগ্নেয়াস্ত্রের চেয়ে একটি শাণিত কলম অধিক শক্তিশালী।
পেশাগত জীবনে তাকে অর্জন করতে হয় মানুষের জীবনের বিচিত্র অনুভূতি সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান এবং আয়ত্ত করতে হয় সীমাহীন ধৈর্য্য ও মনোবল। আর সবচেয়ে বড় কথা তার অভিধানে ‘ব্যর্থতা’ শব্দটি খুঁজে পাওয়া ভার।
প্রতিদান-প্রত্যাশাহীন এই সংবাদশিল্পীর কর্মজীবনে আপন নেশায় কাজ করতে করতে এক সময় দুর্গম-দুস্তর পথের ওপাড়ে হয়ত তার জন্যে অপেক্ষা করবে সাফল্যের নানা স্বীকৃতি, পুরস্কার ও বিরল সম্মান।
আর তাই নির্ভেজাল দেশপ্রেম ও সমাজ সংস্কারের মহৎ ব্রত নিয়ে এ পেশায় শামিল হতে হবে এ প্রজন্মের একজন প্রত্যয়ী সংবাদকর্মীকে। আমার বিশ্বাস, এ প্রজন্মের প্রত্যয়ী একজন কলম সৈনিকই পারেন তার শাণিত চেতনার অগ্নিমশাল জ্বালিয়ে আলোকিত করতে অন্যায়, অপরাধ আর দুর্নীতির বিষবাস্পে ভরা চার পাশের অন্ধকার পরিমন্ডলকে।
তাছাড়া, সত্যিকার অর্থে সাংবাদিকতা এমনই একটি মহৎ পেশা যেখানে একজন সৎ ও পেশাদার সাংবাদিক সমাজ, দেশ তথা জাতির উন্নয়ন-অগ্রগতিতে অনেক কিছুই দিয়ে যান নীরবে-নির্ভতে।
কিন্তু তার যথার্থ প্রতিদান হিসেব না করেই তা তিনি করে যান। খবরের পেছনের খবর সংগ্রহে, ঘটনার নেপথ্য ঘটনার অনুসন্ধানে প্রতিনিয়ত একজন সাংবাদিককে রকমারি বিরূপ বাস্তবতা ও সীমাহীন ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ উৎসের পিছনে ছুটতে হয়।
বোমা বিস্ফোরণ, মিছিল, গুলি, মারামারি, অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প, নৌদুর্ঘটনা, বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস থেকে শুরু করে যুদ্ধক্ষেত্রে পর্যন্ত সর্বত্র তার যেন ক্লান্তিহীন ছুটে চলা। আর পদে পদে তার সামনে রয়েছে ঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতা।
সে কারণে একমাত্র তার পক্ষেই সম্ভব এই পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করা-যার আছে প্রত্যয়ী বিশ্বাস, সামাজিক অঙ্গীকার, দুর্বার মনোবল, ‘প্রতিদান-প্রত্যাশাহীন কর্মস্পৃহা’ এবং সর্বোপরি খাঁটি দেশপ্রেম।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন