মা-বাবা-বোন নেই ওহীর জন্মদিনে
হিটস: 34
ইউসুফ সোহেল : মা-বাবা-বোনের স্নেহ ভালোবাসায় আটটি বছর কেটে গেলেও এই জন্মদিনে তাদের কাউকেই পাচ্ছেনা চামেলিবাগে হত্যাকান্ডের শিকার মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমানের একমাত্র ছেলে ওহী রহমান। আজ ২১ সেপ্টেম্বর ওহী পা দিল নয় বছরে। কিন্তু পাশে নেই বাবা-মা। একমাত্র বোন ঐশী রহমান থেকেও মা-বাবা হত্যার দায়ে জেলে বন্দি। জন্মদিনে হয়তো অনেক উপহার পাবে ছোট্ট ওহী, তবে জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার মা-বাবাকে হারিয়ে সে আজ এতিম দিশেহারা। তাই কোন কিছুতেই যেন মন নেই ওহীর।
প্রিয় বাবা-মার মৃত্যুর পর বেশ কয়েক দফায় ডিবি অফিসে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে হাজির হয় ওহী। ফুটফুটে এই শিশুটিকে তখন সবাই আপন করে নেয়। কথা বলার ফাঁকে সে জানিয়েছিল '২১ তারিখ আমার জন্মদিন। জন্মদিন পালন করেই সবার সঙ্গে গ্রামের বাড়ি যাব। আগেই বাড়ি গেলে জন্মদিন পালন হবে না।'
আক্ষেপ করে তখন ওহী বলেছিল 'আব্বু-আম্মু আমাদের অনেক আদর করত, যা চাইতাম তাই এনে দিত। জন্মদিনে কত খেলনা দিয়েছে। পছন্দ অনুযায়ী নতুন জামা কেনা ছাড়াও এনে দিত সুন্দর একটি কেক, বেলুন আর বর্ণিল নানা সাজ-সজ্জায় সাজানো হতো ঘর।
একপর্যায়ে সে সবাইকে হতভম্ব করে দিয়ে বলে, ‘আপু কেন তাদের (বাবা-মা)মেরেছে। আপু আমাকে কেন মিথ্যা বলেছে। কেন বলেছে, আব্বুকে হাসপাতালে নিয়েছে আম্মু। এমন কাজ কেন করেছে ও।' ছোট্ট ওহীর মুখে এমন কথা শুনে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাসহ সকলেই হতবাক হয়ে যায় সে সময়।
ওহীকে তার চাচা রুবেল খালুর বাসা থেকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাবেন। যাওয়ার আগে গত সপ্তাহেই ওহীকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এ সময় ওহী গ্রামে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে নিজেই জন্মদিনের পরদিন ২২ তারিখ ঠিক করে বলে জানায় ওহীর খালু ইফতেখারুল আলম।
জানা গেছে, রাজধানীর খিলগাঁওয়ের প্যানপ্যাসিফিক হাসপাতালে ২০০৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তার জন্ম হয়। প্রতি বছর ২১ সেপ্টেম্বরে ওহীর জন্মদিনের উৎসব আয়োজন করতেন বাবা মাহফুজুর রহমান ও মা স্বপ্না রহমান। প্রতি জন্মদিনে বাবা অফিস থেকে আগে বাসায় ফিরতেন। মা স্বপ্না বাসায় তৈরি করতেন নানান খাবার। আর এসব খাবারের বেশির ভাগই ওহীর পছন্দ অনুযায়ী হতো।
ওহীর খালা এলিজা নাসরীন সুবর্ণা জানান, 'মাতৃস্নেহে আমরা ওহীর জন্মদিনটা পালন করব।
ওহীর খালু ইফতেখারুল আলম বলেন, 'ঘটনার পর থেকে বেশির ভাগ সময় ওহী পুলিশের কয়েক কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে ছিল। তারাই আপন ছেলের মতো তাকে দেখভাল করেছে। কয়েক দিন হয়েছে ওহী আমাদের কাছে এলো। তার জন্মদিন পালনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। এই উপলক্ষে এরই মধ্যে নতুন জামা ও খেলনা কেনা হয়েছে। ওহীর কেউ নেই, এটা আমরা তাকে বুঝতে দিতে চাই না। তবুও মাঝে-মধ্যে সে আনমনা থাকে।
ইফতেখারুল আলম বলেন, উত্তরায় তার বাসায় ওহীর নবম জন্মদিন পালনের জন্য কেকের অর্ডার তিনি দিয়েছেন। ওহীর চাচা মশিউর রহমান রুবেল ও আত্মীয়দের দাওয়াত করেছেন। কয়েক পুলিশ কর্মকর্তাকেও দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। সবাই চান এর মধ্যেও শুভ হোক ওহীর জন্মদিন।
এত কিছুর পরও বাবা-মা হারানোর বেদনা কি ওহীর কোমল হৃদয় থেকে মুছে যাবে। ক্ষমা করতে পারবে সে তার বাবা-মার হত্যাকারীদের? সব বেদনাকে পাশ কাটিয়ে ওর জীবন এগিয়ে যাক এটাই এখন প্রত্যাশা সকলের।
- See more at: http://jamunanews24.com/index.php/exclusive/40517-2013-09-21-11-16-20.html#sthash.lexfvpaV.dpufPopular Bangladeshi online newspaper jamunanews24.com , online newspaper and website design by pqsit.com
- লিঙ্ক পান
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
জনপ্রিয় পোস্টসমূহ
- লিঙ্ক পান
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন